রামায়ণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
হ Removing Link FA template (handled by wikidata) |
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইলর পতানি মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
||
লাইন ১৭:
[[থাক:সাহিত্য]]
[[থাক:হিন্দু লিচেত]]
সংক্ষিপ্ত রামায়ণ ~ সুন্দর কান্ড
ব্রতকথা পর্ব- ১১
- - - - - - - - - - - - - -
শোন শোন ভক্তগণ শোন দিয়া মন।
সুন্দর কান্ডের কথা করিনু বর্ণন ।।
সীতার খোঁজ পাহিয়া হনুমান বীর।
লঙ্কায় যাবেন তিনি করিলেন স্থির ।।
লম্ফনে করিতে তিনি সাগরকে পার।
মহেদ্র পর্বত শীর্ষে উঠিল এবার ।।
দেহটাকে ফুলিয়ে সে করে অতি স্ফীত।
বানরেরা দেখিল তা হয়ে মনে ভীত।।
তামাসা দেখিবে বলে দেবতারা তাতে।
পাঠাল নাগিনি এক "সুরসা" নামেতে ।।
প্রকান্ড এক হাঁ করে ভয়ঙ্কর সাজে ।
"সুরসা" রোধিল পথ সাগরের মাঝে।।
পবনের বরে সব মায়া জাল গলে ।
সকল বাঁধাকে পার, করেন কৌশলে ।।
এসব বসিয়া স্বর্গে দেখে দেবগণ ।
"সিংহিকা" রাক্ষসী কে করিল প্রেরণ ।।
হনুমানে গিলিল সে করিয়া চাতুরি ।
নির্গত হইল বীর ছিঁড়ে নাড়ি-ভুঁড়ি ।।
লঙ্কাপুরে হনুমান করে পদার্পণ ।
সন্ধ্যা নামিল তখন দিবা সমাপন ।।
একশো যোজন পথ করিয়া যে শেষ ।
অবশেষে হনুমান এলো লঙ্কাদেশ ।।
নিজেকে করিয়া ছোট মর্কটের বেশে ।
অন্বেষণ করে সীতা রাবণের দেশে।।
না পেয়ে সীতার খোঁজ তখন সে স্থানে ।
প্রবেশিল লঙ্কাপুরি অতি সন্তর্পণে।।
সুবর্ণ নির্মিত গৃহ রৌপ সিঁড়ি তার ।
অপরূপ সাজান কী অপূর্ব বাহার ।।
সৌন্দর্য বর্ণনা করে হবেনা তা সারা।
নির্মিত এ লঙ্কাপুরি বিশ্বকর্মা দ্বারা ।।
লঙ্কার প্রতিটি ঘর খুঁজে খুঁজে ফেরে।
পাহিলনা হনুমান তথায় সীতারে ।।
সন্ধান করিল নানা ছোট বড় বন ।
অবশেষে পেল খোঁজ "অশোক-কানন"।।
অশোক কাননে এক বৃক্ষ তলদেশে।
দেখিল রাক্ষসী কিছু পাহারায় বসে ।।
নিকটেতে না গিয়া সে লুকায়িত রয়।
ভাবিল এখানে সীতা হবেন নিশ্চয় ।।
অবশেষে সীতামাকে করিল দর্শন ।
দেখিয়া তাহারে তার জুড়াইল মন ।।
রামচন্দ্রে না দেখিয়া হয়ে শোকাহত।
রাম রাম বলে সীতা কাঁদে অবিরত।।
রাক্ষসীরা সেই স্থান ছাড়িল যেমতি।
হনুমান গিয়া তারে করিল প্রণতি ।।
পরিচয় দিল তাকে হনুমান বীর ।
বলিল শুনিতে সব হয়ে শান্ত ধীর ।।
রামের সেবক তিনি নাম হনুমান ।
এসেছেন করিবারে সীতার সন্ধ্যান ।।
চমকিয়া ওঠে সীতা রাম নাম শুনে ।
রাবণের চাল বুঝি ভাবিলেন মনে ।।
বিশ্বাস তাহাকে তার করিল না মন ।
রামের আঙটি তারে দেখাল তখন ।।
আঙটি দেখিয়া সীতা নিশ্চিত হইল।
সেই ক্ষণে আশীর্বাদ তাহারে করিল।।
বিদায় করিল তাকে বলিলেন আর।
বলিতে রামেরে তারে করিতে উদ্ধার ।।
রামকে দেখাবে বলে সীতার প্রমান ।
মাথার মণিটি তার নিল হনুমান ।।
যাইবার কালে ইচ্ছা হল তার মনে।
তছনচ্ করিল সে অশোক কাননে ।।
প্রহরীরা যারা ছিল বাধা দিতে গেল।
আছাড় খাইয়া তারা পা-হাত ভাঙিল।।
দলে দলে রাক্ষসেরা আসিয়া পড়িল ।
হনুমান ক্রোধে তারা প্রাণেতে মরিল ।।
পাত্রমুখে এই সব সমাচার শুনে ।
পুত্র 'অক্ষ'কে রাবণ পাঠালেন রনে ।।
অষ্ট-অশ্ব-রথে 'অক্ষ' আসেন সমরে ।
অশ্বগুলো হনুমান মারিল আছাড়ে ।।
দুই হস্তে তুলি অক্ষে ছোড়েন ভূমিতে।
এমনি করিল দশা না পারে উঠিতে ।।
অক্ষের এমন দশা দশানন শোনে ।
রাগে ক্রোধান্বিত অতি হইল সে মনে।।
ক্রোধে পুত্র ইন্দ্রজিতে ডাকিয়া রাবণ ।
হনুমানে শিক্ষা দিতে করিল প্রেরণ।।
মহা যোদ্ধা "ইন্দ্রজিৎ" অতি বড় বীর ।
আড়াল হইতে পারে চালাতে সে তির ।।
মেঘের মধ্য হইতে লড়াই সে পারে ।
"মেঘনাদ" সম্ভাষেণ অনেকেই তারে ।।
দেবতারা তাঁর নামে করিতেন ভয় ।
একদা করেন তিনি ইন্দ্রকে বিজয়।।
আসিয়া ছোড়েন বান তার শক্তি বলে।
হনুমান এড়ালো তা অতি সুকৌশলে ।।
ছাড়িল ব্রহ্মাস্ত্র তার তখন সেক্ষনে ।
ছুটিয়া আসিয়া বাণ বাঁধে হনুমানে।।
রাক্ষসেরা দেখিয়া তা মহা উল্লাসিল।
বৃহৎ আনিয়া কাছি সজোরে বাঁধিল ।।
অন্য বাঁধনেতে যদি বাঁধা হয় কারে।
ব্রহ্মাস্ত্রের কাজ আর হইবে যে নারে ।।
অতঃপর রাক্ষসেরা হনুমানে লয়ে ।
নিয়ে গেল লঙ্কাপুরি রাবণ আলয়ে ।।
বাঁধন আলগা তবু না গিয়া পলায়ে ।
মজা দেখিবারে তিনি মিটি মিটি চাহে।।
রাবণ চটিয়া ছিল হনুমান প্রতি ।
কেননা সে করেছিল অতি তার ক্ষতি।।
সভামধ্যে কহিল সে রেগে অতিশয় ।
জানিতে চাহিল কিবা তার পরিচয় ।।
হনুমান বলিল সে রাম অনুচর ।
পাঠিয়াছে নিতে রাম সীতার খবর।।
রঘুপতি রাম যার নাম দিকে দিকে ।
এনেছ করিয়া চুরি, সীতা তার স্ত্রীকে ।।
নিজের মঙ্গল যদি চাহ তুমি বীর ।
রামচন্দ্রে ক্ষমা মাগো নত করি শির"।।
ক্রোধান্বিত লঙ্কাপতি শুনিয়া সে কথা ।
নির্দেশ করিল তার কাটে যেন মাথা ।।
বিভীষণ নামে এক রাবণের ভ্রাতা ।
রাবণে করিল মানা হয়ে পরিত্রাতা ।।
বিভীষণ যিনি ছিল অতীব ধার্মীক ।
বলেন রাবণে এতে লোকে দেবে ধিক্।।
"ক্ষুদ্র বানরে রাবণ , যদি করে হত্যা ।
তাহার মতন বীরে শোভনীয় না তা।।
অন্য কোন শাস্তি দিন করেছে যা কর্ম।
দূতকে হত্যা রাজন নহে রাজ ধর্ম "।।
এসব শুনিয়া রাবণ বলিলেন তেজে।
"আগ্নি যোগ কর এই বানরের লেজে" ।।
অতঃপর রাক্ষসেরা লয়ে হনুমানে ।
মহা অট্টহাস্য করে তারা সেইক্ষণে।।
কাপড়ে লাগায়ে তেল লেজে জড়াইল।
বাড়িয়া সে লেজ তার আকাশে ঠেকিল।।
তারপর লেজে তারা অগ্নি যোগ করে।
এ খবর পেয়ে সীতা অগ্নিদেবে স্মরে ।।
দেববলে হয়না যে তার কোন ক্ষতি।
লেজের আগুনে বাড়ে লঙ্কার দুর্গতি।।
বাঁধন ছিঁড়িয়া ফেলে বীরমুর্তি ধরে ।
লাগাল আগুন তিনি প্রতি ঘরে ঘরে ।।
প্রান ভয়ে রাক্ষসেরা দৌড়ে মরি মরি ।
দাউ দাউ করে জ্বলে সারা লঙ্কাপুরি ।।
হনুমান লেজ তার নিভাইবে বলে ।
ডুবদিল ছুটিয়া সে সাগরের জলে ।।
নিভিল না অগ্নি তার তাই অবশেষে ।
সীতা মাতার নিকট বলিল তা এসে ।।
সীতাদেবী হনুমানে এমনি জানায়।
"নিভিবে আগুন তব মুখের লালায়" ।।
সীতার সেকথা তিনি যখনি শুনিল।
জ্বলন্ত লেজটি তার মুখেতে পুরিল ।।
আগুন নিভিল তবু পেল মনে দুখ্ ।
কেননা আগুনে তার পুড়ে গেল মুখ ।।
পোড়া মুখ দেখে তার সাগরের জলে ।
কষ্ট পেল বড় মনে কাহারে না বলে।।
সীতারে বিদায় লহে হনুমান বীর ।
লঙ্কা ছাড়িয়া যাবেন করে মনস্থির ।।
অতঃপর উঠে এক পর্বত চুড়ায় ।
লম্ফনে সাগর পার করে পুনরায় ।।
কিষ্কিন্ধ্যায় হনুমান পদার্পন করে ।
রামের নিকটে গিয়া প্রনমিল তারে ।।
বানরেরা জয়ধ্বনি করে তার নামে।
সকল ঘটনা তিনি বলিলেন রামে ।।
রামকে সীতার কথা বলে বার বার ।
সীতার সে মণি তাকে দেখাইল আর।।
দেখিল যখন রাম সীতার মণিটি।
হনুমানে জড়াইয়া করে কান্নাকাটি।।
রামের সে কান্না দেখে কেঁদে ওঠে মন।
'সুন্দর কান্ডে'র কথা হল সমাপন ।।
"ব্রতকথা" ভক্তি ভরে করিলে শ্রবণ ।
কষ্টদূর হয় তার ভাল থাকে মন ।।
এরপর রামায়ণে লঙ্কাকান্ড ঘটে ।
আসিব তা নিয়ে ফিরে প্রিয়"অকপটে"।।
____________
|